Monday, October 2, 2023
First Bangla Newspaper In Buffalo,NY


আঁধারে ঘেরা চাঁদ

By বাফেলো বাংলা , in Uncategorized , at নভেম্বর 27, 2019

তানভির আহমেদ: সময়ের প্রয়োজনে কন্সষ্ট্রাকশন ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে এখানে। এই বাফেলো শহরের আনাচে কানাচে নির্মাণকর্মীদের পদচারনা তাই লক্ষ্যনীয়। কাজের সহজলভ্যতা আর তার পাশাপাশি মজুরীর উর্ধগতি চুম্বকের মত টেনে আনছে বঙ্গঁ সন্তানদের এ পেশায়। হেলে দুলে ফুলে-ফেঁপে তাদের চালচলনেই প্রকাশ মেলে কতটা ব্যস্ত তারা। কারো কারো তো আবার কথা বলার ফুরসতই মেলে না। অনেক কষ্টে একমাস বা দু’মাস পর কাজের সিরিয়াল মেলে। কখনও দু’ একজন বনেদী কর্মীর জন্যতো রীতিমত মামাদের তদবির ও ভেস্তে যাবার উপক্রম হয়। কাজের শুরুতেই চাহিদা মাফিক কড়কড়ে নোট তুলে দিতে হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।
এই কড়কড়ে নোটের সুগদ্ধ কখন যে পকেট ফাঁকি দিয়ে বাতাসে ভেসে বেড়াতে শুরু করেছে তার দিনক্ষন নির্ধারণ করা না গেলেও, সে গন্ধে যে মৌমাছিরা ভীড় জমিয়েছে এতে সন্দেহ নেই।
বিগত তিন সপ্তাহে বেশ কয়েকজন নির্মানকর্মীর উপর একদিনে দ’ু দ’ু বার আক্রমনের শিকার হয়েছেন। প্ির তটি ক্ষেত্রেই আক্রমনকারীরা নগদ অর্থ ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। অতর্কিত এই আক্রমনে কোন প্রতিরোধই গড়ে তোলার সুযোগ পাননি আক্রান্ত ব্যক্তি। যদিও দলবদ্ধ ভাবেই তারা কাজ করেছিলেন।
কিন্তু কেন এই আক্রমন! নির্মাণকর্মীদের অনেক সহযোগী বা সাহায্যকারী এখানকার কৃষ্ণাঙ্গ গোত্রীয়। দীর্ঘদিন কাজের সুবাদে ভেতরের অনেক খবরা খবর এখন এই কৃষ্ণাঙ্গদের নখদর্পনে। এ ঘটনা প্রবাহের পেছনে এ সম্প্রদায়ের লোকজনই জড়িত থাকার পম্র াণ মিলছে। এদের কেহ কেহ আবার আমাদের
দেশীয় মালিকগনের সংগে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। মজরু ী কিছুটা কম হওয়ায় অনেক দেশীয় মালিকগনই অনেক কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীকেই নিজের বন্ধু ভাবতে ও বানাতে শুরু করেছেন। কোন কোন কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীর পদচারণা তো তাদের মালিকদের পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রেই বিস্তার লাভ করছে। আমাদের অনেক দুর্বল দিকই তাই আমাদের আগোচরেনাম গন্ধ বর্নহীন এই অচেনা বন্ধুদের কাছে উম্মেচিত হয়ে পড়ছে বাঁধাহীন ভাবে।
এহেন অবস্থায় দেশীয় নির্মাণকর্মী ভাইদের প্রতি পরামর্শ তারা যেন তাদের দৈনন্দিন কাজের মাঝে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা অবলম্বন করেন।
এখানেই হয়তো শেষ অংকটার সমাপ্তি হতে পারত যদি না এই নির্মান শিল্পীদের এক বিশেষ প্রতিনিধির সন্ধান পেতাম। পরিচিতির সূত্রপাত বছর দু’য়েক আগে। ভদ্রলোক একজন শুধু নির্মা ণকর্মী ই নন শিল্পীও বটে। নিখতু কাজ করতে পছন্দ করেন। অপরের জন্য খুব একটা কাজ করেন না। নিজে বাড়ী কিনে তা
মেরামত করেন পরিশেষে তা বিক্রি করেন ক্রেতা খুঁজে। তার ভাষ্য মতে একাজে তিনি লাভবানই হচ্ছেন। দেড় যুে গরও বেশী সময় কাটিয়েছেন নিউইয়র্কে এ পেশায়। এখন এ বাফেলো শহরে করছেন বাড়ী কেনা বেচার কাজ।
সদালাপী হাস্যোজ্জ্বল এই ব্যক্তির মাঝে কেমন যেন একটা বিষন্নতা প্রথম দিনই আমার নজরে আসে! কিন্তু আলোচনার
কোন পর্যায়েই তার কোন গন্ধ খুঁজে পেলাম না। সব সময় কাজের মাঝে ডুবে থাকতে পছন্দ করেন, কি আড়াল করছেন ভদ্রলোক! হঠাৎ একদিন বেশ কিছুদিনের জন্য নিখোঁজ। ফিরে এসে জানালেন পারিবারিক কাজ ছিল। সময় গড়িয়ে চলল, পরিচয়ের সূত্রটা আরো কিছুটা এগিয়ে নিবিড় থেকে নিবিড়তর হতে লাগল।
এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন জানালেন ছেলে অসুস্থ আজ রাতেই নিউইয়র্ক যেতে হবে। ফিরে এলে সৌজন্যের খাতিরে জানতে চাইলাম, ছেলে কেমন অছে। উত্তর এখন একটু ভাল। দিনও, একটি বারের জন্যও তার ফুট- ফুটে ছেলে দু’টো তাকে ‘বাবা’ বলে ডাকেনি। সে দুঃসহযন্ত্রনার স্মৃতি, বোধ সম্পন্ন এক বাবা বয়ে বেড়াচ্ছেন আনমনে। সৃষ্টিকর্তা তাদের পরিপূর্ণ অবয়ব প্রদান করলেও বুদ্ধি বিকাশের দিকটি স্থির করে দিয়েছেন সদ্যজাত শিশুর মত। বাবা-মাকে খুঁজে নেবার ক্ষমতাও তাদের নেই- তাদের ডাকা
তো অনেক দূরের কথা।
চিকিৎসা সেবা তাদের চিকিৎসার ধারা অব্যাহত রাখলেও একজন বুবুক্ষু বাবার ‘বাবা’ ডাক শোনার অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি। চোখের রংহীন নোনা জলে যে বাবার জীবন ক্যানভাস প্রতি নিয়ত একে চলেছে রঙ্গীন ছবি। নেই। তবে সৃষ্টিকর্তার কাছে এই করুণ আকুতি তিনি যেন, তার ‘বাবা’ ডাক শোনার অদম্য ইচ্ছাটা অপূর্ন না রাখেন।
-বাফেলো, নিউইয়র্ক

Comments


মন্তব্য করুন


আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।