কমিউনিটির কথা বলে ‘বাফেলোবাংলা’
আরীফ হোসাইন: এক সময় সংবাদ মাধ্যম বলতে আমরা শুধু পত্রিকা বা টেলিভিশনকে বুঝতাম। তবে ফেইসবুক, টুইটার ও ইউটিউব যুগের কল্যানে সংবাদ মাধ্যমের ধারনাটাও পাল্টিয়েছে। বর্তমানে অনলাইন এ্যক্টিভিস্টদের একটি অংশ মনে করেন এসব পত্রিকা বা টেলিভিশনের যুগ শেষ। এখন সব সংবাদ ফেইসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে পাওয়া যায়। অনেকে টেলিভিশনকে সংবাদ মাধ্যমের তালিকায় রাখলেও পত্রি কার কথা শুনতেই পারেননা। প্রশ্ন ছুড়ে দেন, পত্রিকা আবার কে পড়ে? এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেইটের একটি শহর বাফেলো’তে একটি বাংলা পত্রিকা কি আর গুরুত্ব বহন করবে? আবার ‘বাফেলোবাংলা’ পত্রিকাটি আবার একমাসে একবার প্রকাশিত হয়। আপাতত দৃষ্টিতে ‘বাফেলোবাংলা’ আপনার কাছে তেমন কোন মুল্য না থাকতে পারে। তবে ‘বাফেলোবাংলা’ কমিউনিটি পত্রিকা হিসেবে বাফেলো’র মুলধারা রাজনীতিবিদ ও গভর্মেন্ট অফিসিয়ালরা মর্যাদার চোখে দেখেন। তারা মনে করেন, এ পত্রিকাটি বাংলাদেশী কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। তাদের মনোভাব বা বক্তব্য খুব সহজেই বাংলা ভাষাভাষী মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া সক্ষম। এজন্য বাফেলো সিটি মেয়র ব্রাউন ডব্লিউ. ব্রাউনস বাংলাদেশী কমিউনিটির ছোট বড় অনুষ্ঠানে দাওয়াত করলেই উপস্থিত হতে দেখায় যায়। মেয়র অফিস জানিয়েছে, ‘বাফেলোবাংলার’ নিয়মিত মেয়র অফিস অনুসরণ করে থাকে। এ পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশী কমিউনিটির আপডেট নেয়ার চেষ্টা করেন।
ইরি কাউন্টি অফিসিয়ালরা আনুষ্ঠা-িনকভাবে ‘বাফেলোবাংলা’র সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশী কমিউনিটির খোঁজ খবর নিয়েছেন।
বাফেলো’র ৯ ডিস্ট্রিকের কাউন্সিলম্যানরাও ‘বাফেলোবাংলা’র সঙ্গে নিয়মিত যোগযোগ রক্ষা করে থাকেন। তারাও বাফেলোবাংলা’র সঙ্গে আমাদের কমিউনিটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনেও পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।ফিলমোর ডিস্ট্রিক থেকে ইতিহাস সৃষ্টিকারী প্রথম বাংলাদেশী কাউন্সিলম্যান প্রার্থী মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলমকেও সর্বোচ্চ কাভারেজ দিয়ে ভোটারদের উৎসাহিত করেছেন। যদিও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে তিনি জয়ী হতে পারেনি। বাংলাদেশী কমিউনি-টির একজন প্রার্থী হিসেবে বাফেলো বাংলা জাহাঙ্গীরের পাশে ছিলো।
বাফেলো’তে বাংলাদেশীদের বসবাস এক দশক আগ থেকে শুরু হলেও শক্তিশালী কমিউনিটি হিসেবে আন্তপ্রকাশ করেছে গত কয়েক বছরে। কমিউনিটিকে মর্যাদার স্থানে নিয়ে যেতে গত দু’বছর ধরে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সচেতন মহল মনে করেন, গভর্মেন্ট অফিসিয়াল এবং মুলধারার রাজ-নীতির সঙ্গে কমিউনিটির সেতুবন্ধনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বাফেলো’র প্রথম বাংলা পত্রিকা ‘বাফেলোবাংলা’। এ পত্রিককে বাংলাদেশী কমিউনিটির মুখপাত্র হিসেবেও মনে করা হয়।
‘বাফেলোবাংলা’ শুধু বাফেলো’র বাংলাদেশী কমিউনিটির কথা বলে। গত দুই বছরে পত্রিকাটি প্রথম ও শেষ পাতায় প্রায় ৬০০ টি সংবাদ প্রকাশ করেছে। এ সংবাদের মধ্যে শুধু বাফেলো’র বাংলাদেশী কমিউনিটিকে নিয়ে ৪৮০ টি সংবাদ প্রকাশ করেছে। বাকী সংবাদগুলো আমেরিকার বা বাংলাদেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে প্রকাশ হয়েছে।গত ৩ মাসে প্রথম ও শেষ পাতায় ৭৪ টি সংবাদের মধ্যে ৬৬ টি শুধু কমিউনিটিকে নিয়ে পত্রিকাটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও ভিতরের পাতায় কমিউনিটির আরো ২০ টির মতো সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। মূলত ‘বাফেলোবাংলা’র উদ্দেশ্যে হচ্ছে কমিউনিটির প্রতিনিধিত্ব করা। প্রতি সংখ্যায় প্রকাশিত হচ্ছে কমিউনিটিতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ইভেন্ট, মু-লধারার সংবাদ, অপরাধের ঘটনা, সচেতনামূলক সংবাদ ও চাকুরীর সংবাদ।এছাড়াও বাফেলো’তে বাংলাদেশী নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে প্রতি সংখ্যায় ২/৩ টি করে ইংরেজীতে আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। এসব আর্টিকেলের লেখকরাও নতুন প্রজন্মের।
অন্যদিকে নিউইয়র্ককে বাংলাদেশী কমিউনিট কেন্দ্রীক ১০ টির অধিক নিয়মিত পত্রিকা থাকলেও কমিউনিটি কেন্দ্রীক এতো বেশী সংবাদ প্রকাশ করেনা। এ সব কারণে মাস শেষে ‘বাফেলোবাংলা’ জন্য অনেকেই অপেক্ষায় থাকেন কখন নতুন সংখ্যা হাতে পাবেন। প্রকাশিত সংখ্যা বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদ এবং গ্রোসারীতে থেকে সংগ্রহ করেন আগ্রহীরা। বাফেলোবাংলা’র দু’বছর পূর্তিতে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে অভিনন্দন।
কমিউনিটির কল্যানে বাফেলোবাংলা’র প্রকাশনা অব্যহত থাকুক।