করোনা বাড়ছে কি করবেন?
ডা. ফাহিম তাজওয়ার: ঠান্ডা বাড়ার সাথে সাথে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণও বাড়তেছে। অনেকেই উদ্বিগ্ন এই শীতে ফু¬-এর সাথে করণা ভাইরাসের সংক্রমণ আবারোও মহামারী আকারে ধারণ করতে পারে যা আমাদের বর্তমানের ক্লান্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আবারো চাপে ফেলে দিতে পারে। ইতিমধ্যে আপনারা হয়তোবা শুনেছেন যে আবার অনেক বাংলাদেশি বাফেলোতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং দুই একজনের মৃত্যুর কথা আমাদের কানে এসেছে।
এই জন্য আমাদের আবারো সাবধান হয়ে যেতে হবে। যেভাবেই হোক এই শীতে নিরাপদ থাকতে হবে।
ভ্যাকসিন হয়েতাবা এই বছরের শেষের দিকে না হলে আগামী বছরের প্রথম দিকে চলে আসতে পারে। অক্সফোর্ডের এস্ট্রোজেনেকা এবং আমেরিকার মর্ডানা ফার্মাসুটিক্যালের দুইটা ভ্যাকসিন একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভ্যাকসিন প্রথমদিকে স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। পরবর্তীতে সাধারন জনগনের মধ্যে আগামী বছরের শুরুতে বা মাঝামাঝিতে বিলিয়ে দেওযা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এজন্য আমাদের কষ্ট করে হলেও আরো কয়েকটি মাস সতর্কতার মধ্যে নিরাপদ ভাবে জীবন যাপন করতে হবে।
ঠান্ডার কারণে যেহেতু আমরা বেশিরভাগ সময়ই ঘরবন্দি থাকবো সেজন্য খেয়াল রাখতে হবে নিজের ঘর ছাড়া অন্য কোন বদ্ধ পরিবেশে বেশি সময় না থাকা। এই সময় অন্যের ঘরে দাওয়াতে বা পার্টিতে না যাওয়া। মনে রাখবেন যে দরজা জানালা বন্ধ পরিবেশে ভাইরাস খুব সহজে একে অন্য কাছে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যখনই আমরা একে অন্যের ৬ ফিট দূরত্বের ভেতরে চলে আসবো, মনে করে মাস্ক ব্যবহার করবেন। এটা মসজিদে হোক, দোকানের ভেতরে হোক অথবা অন্য কোনো সামাজিক মেলামেশা জাযগায় হোক।
মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সঠিক ভাবে। এটা যেন শক্তভাবে নাক এবং মুখের উপর বসে থাকে। যদি ঢিলা ঢালা হয় তাহলে কিন্তু আপনি পুরোপুরি নিরাপদ না। কাপড়ের মাস্ক নিয়মিতভাবে ক্লোরিন দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কগুলো একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়াই ভালো। যে মাস্ক পড়ার পরেও ফুঁ দিয়ে মোমবাতি শিখা নাড়িয়ে দেওয়া যায়, ওই মাস্ক ভাল না। ৩টি লেয়ারের FDA অনুমোদিত ভালো মাস্ক ব্যবহার করুন।
যাদের কোন প্রকার সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, গা ব্যথা, মাথা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পরা, নাকে গন্ধ না পাওয়া এই ধরনের কোন সমস্যা থাকে, তাদের উচিত অন্যের সংস্পর্শে যাওয়া থেকে বিরত থাকা। এমনকি ফার্মেসি বা মসজিদের ভেতরেও এই মুহূর্তে যাওয়া উচিত না। আপনার যদি করোনা ভাইরাসের কোন সিমটম বা উপসর্গ থাকে, আর তা যদি আপনার কাছ থেকে অন্য কারো কাছে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে উনি কিন্তু মারাও যেতে পারেন। এ বিষয়টি দয়াকরে মাথায় রাখবেন।
বাচ্চাদের দিকে বিশেষ করে মনোযোগ দিবেন। যদি তারা স্কুলে যায় তাহলে অবশ্যই প্রত্যেকদিনই খেয়াল রাখবেন তারা সুস্থ আছে কিনা না। যদি কোন প্রকার শারীরিক সমস্যা দেখা যায়, তাহলে সাথে সাথে স্কুল এবং তার ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
দোকান বা শপিং মল হচ্ছে আরেকটি জায়গা আমরা প্রায়ই যাই। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের বাংলাদেশী গ্রোসারি দোকানগুলোতে খোলামেলা জায়গা খুবই কম। দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটাহাঁটি করা সম্ভব হয়না। এই জন্য গত এপ্রিল-মে মাসে আমরা যে ধরনের নিয়ম মেনে চলে ছিলাম, সেই নিয়ম গুলো আবারো আমাদেরকে মেনে চলতে হবে। হয়েতাবা দোকানের ভেতর না দিয়ে ফোনের মাধ্যমে অর্ডার দিয়ে, বাহির থেকে পিক আপ করতে পারেন। ক্যাশ অর্থ আদান প্রদান না করে, কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করলে ভালো। বর্তমান পরিস্থিতিতে দোকানের ভেতর যত কম সময়ে পারা যায় কাটানো।
একই সাথে আমাদের উচিত মানসিকভাবে আবারো লকডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া। যদি আশপাশের এলাকাতে ইনফেকশন বেড়ে যায়, তাহলে সরকার বাধ্য হবে লকডাউন জারি করতে। আমাদের উচিত এখন থেকে আর্থিকভাবে, সামাজিকভাবে আমাদের এই মন মানসিকতা নিয়ে এই শীতে প্রস্তুত থাকা।
নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখবেন। আপনার ডায়াবেটিকস, ব্লা ড প্রেসার, হার্টের সমস্যাকে কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী থাকবে। চেষ্টা করবেন এই শীতের মধ্যেও সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা।
সবুজ শাকসবজি এবং তাজা ফল যত পারা যায় বেশি বেশি করে খান। ভিটামিন সি আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে ভাইরাসের আক্রমণের সময়। আর এই ভিটামিন সি পাওয়া যায় লেবু, কমলা, কিউই, টমেটো, স্ট্রবেরি অথবা সবুজ শাক-সবজিতে। চেষ্টা করুন বাজারের প্যাকেট জাতীয় প্রসেস খাবার না খেয়ে বাগানের তাজা শাকসবজি খেতে। ভাইরাস জনিত সমস্যা দেখা দিলে বয়স্করা জিংক ৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট দিনে একটা করে খেতে পারেন।
যারা এখনও ফ্লু ভ্যাকসিন নেননি, দয়া করে তাড়াতাড়ি নিয়ে নিন।Rite Aid, Walgreen, CVS ফ্লু ভ্যাকসিন ফ্রিতে অফার করছে। যাদের বয়স ৬৫ এর আশপাশে তারা নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন নিতে পারেন। ঞফধঢ় গত ১০ বছরে না নিয়ে থাকলে আজই নিয়ে নিন। অন্য আর কি ভ্যাকসিন আপনি নিতে পারবেন, ডাক্তার সাথে পরামর্শ করুন।
করণাভাইরাস কে নিয়ে এখনও অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। অনেকেই করণায় আক্রান্ত রোগীকে অন্য চোখে দেখছেন। এতে করে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যদি কেউ করণা আক্রান্ত হন অথবা যদি কোনো ভাইরাস জনিত সমস্যা দেখা যায় তাহলে এটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। আমরা মনে করি যে, যদি অন্যরা জেনে ফেলে তাহলে আমাদেরকে হয়তোবা ভিন্ন চোখে দেখবে। এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যদি কেউ অসুস্থ হন, তাহলে আপনার উচিত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেকে জানানো এবং যদি আপনার সংস্পর্শে কেউ অসুস্থ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগেও সময় কাটান, তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া। আর বাকিরা যারা এই মুহূর্তে সুস্থ রয়েছি, আমাদের উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে যারা অসুস্থ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। মহামারী শুধু অন্যের জন্য নয়। এই ভাইরাস জাতি-ধর্ম ছোট-বড় সুস্থ-অসুস্থ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। আমরা যে কেউ আক্রান্ত হতে পারি । আমাদের সবাইকে একসাথে এর মোকাবেলা করতে হবে। কয়েক মাস আগেও যখন অন্যান্য শহরগুলো এই মহামারিতে কাবু ছিল, নি-উইয়র্ক শহরে শতশত লোক মারা যাচ্ছিল, তখন আমরা বাফেলোতে আলহামদুলিল্ল -াহ মহামারীর দাপট তেমন একটা বুঝতে পারেনি। এর প্রধান কারণ, আমরা নিয়ম মেনে চলে ছিলাম। আমরা জানি কি করতে হবে। কি করলে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখা যাবে। আমাদেরকে আবারো ওই নিয়মগুলোতে ফিরে যেতে হবে। আসুন, আমরা নিজে বাঁচি এবং পরিবার সমাজকে করণার আগ্রাসন থেকে নিরাপদ রাখি।
-বাফেলো, নিউইয়র্ক