বাচ্চাকে নিয়ে প্লেন ভ্রমণের কয়েকটি টিপস
ফাতিমা মিষ্টি: আমরা বাবামারা বাচ্চাদেরকে নিয়ে প্লেন ভ্রমণ করতে গেলে একটু দুশ্চিন্তায় পরে যাই। কিভাবে কি করবো, বাচ্চাদেরকে এয়ারপোর্ট বা প্লেনে কিভাবে খেয়াল রাখবো, কোথায় কি খাবে বাচ্চারা – নানা ধরণের চিন্তায় ভ্রমণের আনন্দটাই একটু নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে তো আবার বাচ্চা নিয়ে কোথাও যেতে ও চায় না। সে সব বাবামার্ জন্য আমার অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি টিপস শেয়ার করছি। গত অক্টোবরে আমি আমার তিন সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আসি যাদের বয়স ৫ বছর, ৩ বছর এবং ৮ মাস। আলহামদুলিল্লাহ আগে থেকে আমি এবং আমার হাসব্যান্ড প্ল্যান করার কারনে ওদেরকে নিয়ে তেমন কষ্ট হয়নি ।
(১) নবজাতক বা একমাসের চেয়ে কম বয়সী শিশুকে নিয়ে ভ্রমণের আগে আপনি ডাক্তারের পরার্মশ নিলে ভাল। সিট্ আপনার সুবিধা মতো আগে থেকেই ঠিক করে নিবেন। Bassinet বা দোলনা এরোপ্লেন সরবরাহ করে থাকে। অনলাইন বা ট্রাভেল এজেন্টর মাধ্যমে আগ থাকে বুকিং দিতে হবে। বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স সিট বুকিংএ এক্সট্রা চার্জ করে না। কিন্তু এই সিটগুল কম পরিমানে। অ্যাডভান্স অনুরুধ করতে হয় – যে প্রথমে আসবে সেই পাবে। মনে রাখবেন bassinet ব্যবহারের জন্য বাচ্চার উচ্চতা ২৮ইঞ্চি এবং ওজন 11 kg (24.2 lbs) বা তার কম হতে হবে. Bassinet সিটগুলোতে অনেক জায়গা পাওয়া যায়। বাচ্চারা ইচ্ছামতো ঘুরাঘুরি করতে পারে। সাথে বাথরুমও কাছে পাওয়া যায়।
Bassinet সিটের অসুবিধা হল যখনি প্লেন সিটবেলট sign আসে, তখন আর বাচ্চাকে bassinetএ রাখা যায় না। দেখা যায় তখন বাচ্চা কে ব্যাসিনেট থেকে উঠাতে গিয়ে বাচ্চার ঘুম ভেঙে যায় আর কান্নাকাটি করে। সেক্ষেত্রে আপনি এয়ার হোস্টেস এর সাথে কথা বলে বেসিনেট এর পরিবর্তে এক্সট্রা সিট অনুরোধ করতে পারেন প্লেনে সবাই বসার পরেই। যদি এক্সটা সিট খালি থাকে তাহলে আপনাকে ওই সিটগুলো দিয়া দিবে। আপনি তখন blanket দিয়ে বাচ্চাকে সিটে শুয়েই রাখতে পারেন।
(২) বাচ্চারা আমাদের দেখাদেখি জেদ ধরে Carry-on ব্যাগ নিবে এবং আমরা অনেকেই বাচ্চাদেরকে খুশি করার জন্য Carry-on ব্যাগ দিয়ে দেই। বাচ্চা কিচু সময়ের জন্য ব্যাগটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে কিন্তু কিছুক্ষন পরে সে ক্লান্ত হয়ে যাবে । তখন আপনাকেই বাচ্চা সহ ব্যাগটা বহন করতে হবে। সেইজন্য বাচ্চারা ৯ বা ১০ বছরের নিচে হলে, কোন Carry-on ব্যাগ দিবেন না।
(৩) ফ্লাইটের দিন নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিমানবন্দরে চলে যাবেন। সাধারণত wheelchair passenger পরেই বাচ্চা সহ পিতামাতা ও অভিভাবকদেরকে প্লেনে উঠার সুযোগ দেয় হয়।
(৪) শিশুকে নিয়ে ভ্রমণ করলে সাথে অবশ্যই অনেক ডাইপার রাখবেন। পর্যাপ্ত প্লাস্টিক ব্যাগ রাখুন, যেন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও শিশুর জন্য সঙ্গে খেলনা ও কিছু বই রাখতে পারেন। পাশাপাশি নিজের জন্য কিছু একাধিক কাপড় বহন করুন। কেননা, শিশুকে সামলাতে গিয়ে কিংবা খাবার খাওয়াতে গিয়ে আপনার পোশাকে ময়লা লেগে যেতে পারে। তাই একাধিক পোশাক রাখলে সুবিধা অনুযায়ী বদলাতে পারবেন। ছোট তোয়ালে রাখুন, যেন শিশুর মুখ ও শরীর মুছে দিতে পারেন। সঙ্গে নার্সিং কভার রাখুন, যেন কোনো প্রকার দ্বিধা ছাড়া শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন।
(৫) খালি পানির বোতল নিয়ে যাবেন। সিকিউরিটি চেকিং এর পর ওই বোতলে নিকটবর্তী ওয়াটার ফাউন্টেন থাকে পানি নিয়ে নিন। অথবা প্লেন উঠার পর এয়ার হোস্টেসকে বলে বোতলে পানি নিয়ে রাখবেন। লম্বা ফ্লাইটে ঘন ঘন পানির পিপাসা ধরে।
(৬) ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুর জন্য সাথে কিছু শুকনো খাবার রাখুন। বাচ্চারা সাধারণত প্লেনের খাবার খেতে পারেনা। তাই যা যা খায় তাই সাথে নিয়ে নিন। ড্রাই ফুড হলে ভালো যেমন peanut , cookies ,candy এইগুলা বেশি করে সাথে রাখবেন।
(৭) যখন বিমানটি উঠা শুরু করে বা নামতে যায়, তখন কানের অভ্যন্তরে বায়ুচাপ বেড়ে যায়, যার কারণে কানে অনেক ব্যাথা করে। এই সমস্যা এড়াতে, বাচ্চার মুখে কিচু যেন থাকে যা সে চুষতে পারবে যেমন lolli pop , bubble gum. নবজাতকদেরকে মিল্ক বা puffs দিবেন অথবা pacifier চুষতে দিবেন। তা নাহলে বাচ্ছারা কানে প্রচুর ব্যাথা পায় এবং কান্না কাটি শুরু করে।
(৮) স্বল্প পরিমানে liquid tyenol নিতে পারেন যদি প্লেনে বাচ্ছার জ্বর আসে বা ব্যাথা পায়। প্রস্তুত থাকা ভালো। পেডিয়াট্রিকরা কোনও ঘুমের ওষুধ না নিতে বলেন, বিশেষত ৬ বছরের নিচে বাচ্চাদেরকে কোনও প্রকার ওষুধ না দিতে উৎসাহিত করেন। তারপরও যদি আপনি একান্তই বাচ্চার জন্য ঘুমের ওষুধ নিতে চান, তাহলে খুবই স্বল্প পরিমানে liquid benadryl অথবা melatonin ট্যাবলেট ( ১ mg বা তারচে কম) দিতে পারেবেন। শিশুর ডক্টরের সাথে অবশ্যই তা পরামর্শ করে নিবেন। প্লেইন যাত্রার আগে ওষুইধের ট্রায়াল দিলে ভালো হয়। যদি কোনও বাজে রিঅ্যাকশন বা প্রতিক্রিয়া হয় ঘুমের মেডিসিনের কারণে, আপনি সাথেসাথে শিশুকে হসপিটালে নিয়ে যেতে পারবেন। প্লেনে এই সুজুগটি পাবেননা।
আশাকরি এই টিপসগুলি আপনাদের আগামী প্লেন যাত্রায় উপকারে আসবে।
Comments