সুখে দুঃখে বাফেলো: বিড়ম্বনা
তানভির আহমেদ: অনেক দিন পর হঠাৎই নিতাই’দার কথা মনে পড়ল।আশির দশকে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠের একজন নিয়মিত ক্রিকেট খেলোয়াড় এবং দর্শক। ঝাঁ ঝাঁ রোদের মাঝেও দেখা মিলত কালো বর্ডার দেয়া হাতাকাটা সাদা সোয়েটার পরিহিত অবস্থায় ক্রিকেট খেলা অনুশীলন করতে।
মাঝারি গড়নের স্থূলকায় নিতাইদা ছিলেন বেশ হাস্যরসিক। কব্জিতে জোড় থাকলেও বডি ফিটনেস না থাকায় ডাক সাইটে দলগুলোতে তার স্থান হয়নি বেশিদিন। তাই বলে দমে থাকার পাত্র নন তিনি। একেবারে আনকোরা তরুণদের জোগার করে শুরু করে দিলেন দল গঠনের কাজ। দলের সকলেই বয়সে তার চেয়ে অর্ধক-এরও কম। তাদেরকে সাথে নিয়েই চলে তার অনুশীলন পর্ব। অনুশীলন পর্বে এ সব তরুণ বোলারদের তুলোধুনো করে এক রকম আত্মতৃপ্তি বোধ করতেন তিনি। ব্যাট হাতে ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক দেখতেন কোন দর্শক আছে কিনা! মনের কোনে লুকিয়ে থাকা গোপন ক্ষোভ ঝরে পড়ত সদ্য আগত আনকোরা এ নবীনদের উপর। এসব দেখে পোড় খাওয়া দর্শকরা রসিকতা করে বলত, গোল পাকিয়েছে ওর ভূরিটা। রিক্সায় তার দ্বিতীয় সঙ্গীটির অবস্থা হত ত্রাহি ত্রাহি। যাই বলি না কেন, ক্রিকেটকে জনপ্রিয় অবস্থায় নিয়ে যেতে তাদের অবস্থানকে কোন মতেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।আজ নিতাইদাকে মনে করিয়ে দেশের জন্য যিনি বিশেষভাবে ভূমিকা রেখেছেন তিনি আমাদের আশেপাশেরই একজন বিশেষ জ্ঞানী ব্যক্তি। যিনি তার অবসর সময়ের অনেকটাই ব্যয় করেন কোরআন কিংবা হাদিসের কোন ফাঁক ফোঁকর বের করা যায় কিনা সে বিষয়ে।পরিচিতির সুবাদে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তাই ধর্মীয় বিষয়ক বিভিন্ন হাদিস ও কোরআনের ব্যাখ্যার অনলাইন কপি সংগ্রহ করে প্রদান পূর্বক তার্কিক্ আলোচনা সুযোগ খোঁজেন বা নেন।
কোন বিশেষ কারণে তিনি কলেজ পর্যায়ে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে পড়াশুনা করতে বাধ্য হন। ইসলাম ধর্মের অনুসারী না হয়েও এ ধরনের বিশেষ বিষয়ে পড়ার কারণে ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও ধর্মীয় অনেক বিষয়ে উনার জানার সুযোগ হয়। কিন্তু সে সমস্ত অনেক বিষয়েই উনার জানার সীমাবদ্ধতা থেকে যায় স্বভাবতই পরিবেশ জানিত কারণে।তা ছাড়া সর্ব সাধারণের সাথে এ ধরনের আলোচনায় তিনি তার বিভিন্ন প্রশ্নমালার সঠিক উত্তর পেতেন না। এ ধরনের বহুমুখী সমস্যা প্রথম থেকেই তাকে ধর্মীয় বিষয়ে এক বিশেষ ধরনের প্রশ্ন ব্যাংকে পরিণত করেছে। তাছাড়া উনার অবস্থান থেকে ইসলামী চিন্তাবিদ বা প্রাজ্ঞ্যজনদের প্রতি প্রশ্নবান ছুড়ে দেয়াও সম্ভবপর ছিল না। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে। তাই এখানকার লাগামহীন স্বাধীনতার মাঝে উনি নিশ্চিন্তে আপন স্বাধীন চিন্তার চর্চা চালিয়ে যাবার সুযোগটি হাতছাড়া করতে রাজী নন। তা ভালো কথা বৈকি, কিন্তু এমনটি ভাবা হয়তো ঠিক হবে না তাঁর প্রশ্নগুলোর কোন সঠিক জবাব নেই- শুধু প্রয়োজন স্থান, জ্ঞান ও পাত্রের সমন্বয়।
যারা এ প্রশ্নগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা কিংবা জবাব দিতে পারেন বা জানেন তারা কিন্তু আবার সচরাচর তার সখ্যতার মাঝে পড়েন না। তাদের খুঁজে নিতে হয় অথবা তাদের খোঁজ পেতে একটু বুদ্ধি খাটাতে হয়।
সারা পৃথিবী জুড়ে অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তিরাই আল-কোরআন নিয়ে গবেষণা বহু পূর্ব হতেই করে আসছেন। এদের সকলেই যে আবার ইসলাম ধর্মের অনুসারী তা কিন্তু নয়।অতীতেও অনেক অনেক অজানা প্রশ্নের গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত সমাধান প্রতিষ্ঠিত আছে। বিশ্বাস শব্দটির ব্যপকতা বিশাল। এটি ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিত্বের আরেকটি দিক।একজন মুসলিম এবং আরেকজন অমুসলিম ব্যক্তির বিশ্বাসের সূচক একই মান নির্দেশ করে না। তাই উত্তরের গ্রহণযোগ্যতা হবে ভিন্ন ভিন্ন এটাই স্বাভাবিক। তবে এমন ভাবার অবকাশ নেই সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ না জেনে না বুঝে ধর্ম পালন করছেন। মানুষের জানার পরিধি এখনও অনেক সীমিত। তবে জ্ঞান চর্চায় কোন সীমাবদ্ধতা নেই, যদি সেটা ইতিবাচক সূচকে নির্দেশ করে।
যদি সত্যিই কারো জানার বা বোঝার প্রয়োজন হয়, তবে তা এই বাফেলো শহরেই আয়োজন করা সম্ভব। তবে আপনি কি সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত? বাস্তব সত্যকে কপটতার চিনি দিয়ে না মুড়ে তার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারাই হল মানবীয় সংস্কৃতি। যার সুষ্ঠু চর্চা গড়তে পারে একটা সুন্দর বিশ্বকে।
পরিশেষে শুভেচ্ছা জানাব বাফেলো বাংলার তৃতীয় বর্ষে পদার্পণকে। নতুন আনন্দধারার আলোকে উদ্ভাসিত হউক তাদের পথচলা। সম্পাদক মহোদয়ের দক্ষ পরিচালনায় বাফেলো বাংলা খুঁজে পাক নতুন ঠিকানা।
-বাফেলো, নিউইয়র্ক
Comments