‘সুখে দুঃখে বাফেলো’ সাজু
তানভির আহমেদ:
এইতো আর মাত্র কটা দিন, নতুন বছরের ঝলমলে সোনালী সূর্যটির দেখা মিলবে পূর্ব আকাশে। সাজু, তুমি কই? তোমায় শুভেচ্ছা জানাব বলে নির্ঘুম জেগে রয়েছি। উজাড় করা ভালোবাসায় আঁকড়ে ধরব বলে দুহাত বাড়িয়েই রেখেছি। তুমি যে সেই আরাধ্য ধন সব বাবা-মার কাছেই। অনেক সাধনায় যে তোমার সন্ধান মেলে। আমার সব ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার বরণ ডালা যে তোমার তরেই তুলে দেব ঠিক করেছি।তুমি কই! কথা বলবে না, ঠিক করেছ। কিন্তু কেন এত অভিমান!
সাজু তোমার এ চলে যাওয়া আমাকে ব্যথিত করেছে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে তাই কলম ধরেছি মনের ভাব কিছুটা লাঘবের জন্য। সাজু একজন হতভাগ্য কিশোর শ্রমিক। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানার অগ্নিকা-ে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া অনেক হতভাগ্যদের মধ্যে একজন। অভাবী সংসারের দুঃখ লাঘবে যোগ দিয়েছিল কাজে একজন শিশু শ্রমিক হিসাবে। মাস শেষে মজুরী মিলত দশ হাজার টাকা। যার পুরোটাই সে তুলে দিত হাসিমুখে তার মার হাতে। বাস্তবতার নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত এ পরিবারগুলো তাদের এ শিশু সন্তানগুলোকে এভাবেই তুলে দেয় চরম অনিশ্চয়তার মাঝে। সাজুর মত ঝরে যাওয়া ফুলগুলো তাই ঐ দূর আকাশের গায়ে মিটি মিটি তাঁরা হয়েই শোভা পায়।কখনও কেহ চোখ মেলে দেখে আবার কখনও নয়।
সাজুও স্বপ্ন দেখত লেখাপড়া শিখে বড় হবার। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর রাতে এসে সে পড়াশুনা করত। দশম শ্রেণির এ ছাত্রের অভিলাষ ছিল আগামী বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দিবে। সে স্বপ্ন তার স্বপ্নই রয়ে গেল।
আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি বাবা-মাই দেশে কিংবা প্রবাসে কঠোর পরিশ্রম করেন (দু’একজন বাদে) তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার পেছনে। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ তারা হাসিমুখে ব্যয় করেন এসব সন্তানদের পেছনে। কিন্তু খুব কম সন্তানই তা উপলব্ধি করে। মা-বাবার প্রতি তাদের সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ এতটাই দুর্বল যে, মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে তারা রক্ত মাংসের মানুষ কিনা, কিংবা বোধ শক্তিহীন জড় পদার্থ কিনা। অথচ এই সব সাজুরা কত অল্পতেই খুশী। বাবা-মার দুঃখ বুঝে তাদের পাশে দাঁড়ায় স্বশ্রদ্ধ ভালোবাসায়। অধুনা ফিলমোর নিবাসী এক ভদ্রলোকের ছেলে (সাজুর বয়সীই হবে) তার বাবাকে জনসমক্ষে বলেই ফেলল তোমার দেশ ভাল না সহ…. আরো অনেক কিছু। ভদ্রলোক ডিফেন্ড করতে ব্যর্থ হলেন তার ছেলেকে। অথচ তিনি জানেন এ নিবাসটি গড়ার পেছনে তার রক্তক্ষরণের অতীত। তার সন্তানটি কি সে অতীত দেখেনি? বাবাকে উপহাস করে সে ধনী হতে চেয়েছে। কই সাজু তো পারেনি তার দরিদ্রতার দায় তার বাবার উপর চাপিয়ে তাকে উপহাস করতে। অনেক বাবাকে দেখেছি তাদের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে সন্তানদের ভালবাসা হাতড়ে বেড়িয়েছেন, কিন্তু থ্যাংকস (ধন্যবাদ) এর বেশী ভাগ্যে জোটেনি। এ লেখায় যদি কোন হতভাগ্য বাবার অবুঝ মনে আঘাত দিয়ে থাকি, একজন বাবা হিসাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনাদের দু’চোখের লোনা জল সন্তানদের আগামীর পথ চলার জন্য হউক আশীর্বাদ।
নতুন বছরে সবার জন্যই রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা। বিশেষ করে প্রতিটি বাবা-মার জন্য।
Comments