Hydroxychloroquine (হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন) নিয়ে কিছু ভুল নিউজ এর ব্যাপারে
সাপ্তাহ 10 দিন আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে এই ওষুধ টা কে করোনা চিকিৎসায় খারাপ এবং ভুল ওষুধ বলে আখ্যায়িত করা হয়। WHO (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) পর্যন্ত তাদের একটি গবেষণা কিছুদিনের জন্য থামিয়ে দেয়।
আপনাদের মনে আছে কিনা জানিনা কয়েক মাস আগে এই ম্যালেরিয়া এবং আর্থ্রাইটিস ঔষধটি repurpose করা হয়েছিল করোনাই আক্রান্ত রোগীদের জন্য। ল্যাবের মধ্যে দেখা গেছিল যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন করোনা ভাইরাস মানুষের কোষের ভেতর ঢুকা বন্ধ করে দিতে পারে এবং সাথে সাথে ভাইরাসের মাল্টিপ্লাই হওয়ার ক্ষমতাকেও কমিয়ে দিতে পারে। এই কারণেই করোনার প্যানডেমিক এর প্রথম দিকে চায়না, ইউরোপ এবং আমেরিকায় এই ওষুধটি ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হয়েছিল।
এটা কি নিয়ে বিশ্বে অনেক পলিটিক্সও খেলা হয়।
পরবর্তীতে এপ্রিল এবং মে মাসের প্রথম দিকে কয়েকটি নামকরা মেডিকেল জার্নালে এটার কার্যকরী ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তখন বলা হচ্ছিল যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করে তেমন একটা উপকার পাওয়া যাচ্ছে না।
মে মাসের শেষের দিকে 22 তারিখে স্বনামধন্য মেডিকেল জার্নালে The Lancet প্রকাশিত হয় একটি রিপোর্ট যেখানে দেখানো হয় যে, এই ঔষধটি ব্যবহারের কারণে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বরং ক্ষতি হচ্ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এই রিপোর্টটি পাবলিশ এর পরেই WHO তাদের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে একটি গবেষণা থামিয়ে দেয়।
এটা ঠিক ছিলনা।
The Lancet প্রকাশিত ওই রিপোর্টটিতে যে তথ্য ব্যবহৃত হয়েছিল তা সংগ্রহ করেছিল Surgipshere নামের এক ছোট্ট আমেরিকান প্রতিষ্ঠান যার প্রধান হচ্ছেন ভাসকুলার সার্জন ‘স্বপন দেশাই’। উনি দাবি করেন তার প্রতিষ্ঠান দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের ১২০০ হসপিটাল থেকে ৯৬০০০ করোনা আক্রান্ত রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করে। যার উপর ভিত্তি করে এ রিপোর্ট লেখা হয় এবং তা প্রকাশিত হয ওই নামকরা মেডিকেল জার্নালে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ডাক্তাররা এবং বিভিন্ন মেডিকেল কমিউনিটি এই তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। কারণ যে যে দেশের কথা ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে তাদের অনেক দেশেই ইলেকট্রনিক তথ্য রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। এই জটিল মেডিকেলতথ্যগুলো কিভাবে এই ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক এর মাধ্যমে সংগ্রহ করল তা বোধগম্য হচ্ছে না। তাও আবার প্রায় এক লক্ষ করণায় আক্রান্ত রোগীর।
বেশিরভাগ মেডিকেল কমিউনিটি স্বপন দেশাই সংগ্রহকৃত এই তথ্যকে বাতিল করেছে। ভুল বুঝতে পেরে The Lancet তাদের প্রকাশিত রিপোর্টটি সরিয়ে ফেলেছে। WHO আবার হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন গবেষণা চালু করেছে।
মজার ব্যাপার হলো স্বপন দেশাই আইভারমেকটিন বা স্ক্যাবো ৬ নিয়ে নামকরা New England Medical Journal আরেকটি রিপোর্ট করেছিল যেখানে বলা হয়েছে আইভারমেকটিন করোনার চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া গেছে। সাউথ আমেরিকার কয়েকটি দেশ এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তাদের জাতীয় গাইডলাইন এ আইভারমেকটিন এর ব্যবহারের নির্দেশ দেয়। এখন ওই রিপোর্টের ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে এবং the New England Medical Journal তাদের প্রকাশিত রিপোর্টটি সরিয়ে ফেলেছে।
মনে রাখবেন, নামকরা মেডিকেল জার্নাল থেকে এইভাবে রিপোর্ট সরিয়ে ফেলার ঘটনা খুবই বিরল।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কি করোনায় ব্যবহার করা যাবে কিনা না তানিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতেছে। ইনশাআল্লাহ এই মাসের শেষের দিকেই আমরা কয়েকটি রিসার্চের (মানসম্মত) রেজাল্ট পেয়ে যাব তখন বুঝা যাবে করোনায় এই ওষুধ ব্যবহার করা খারাপ না ভালো।
আইভারমেকটিন নিয়েও আরো কিছু গবেষণা করা দরকার।
(ডাক্তার ফাহিম তাজওয়ার বাফেলো, নিউইয়র্ক)
Comments