Monday, October 2, 2023
First Bangla Newspaper In Buffalo,NY


সিকিউরিটি ক্যামরা স্থাপন ও কমিউনিটি পেট্রোল গঠনের পরামর্শ ! এক মাসে ১০ ডাকাতি : টার্গেট বাংলাদেশীরা

By বাফেলো বাংলা , in Lifestyle , at নভেম্বর 27, 2019

আরীফ হোসাইন: বাফোলোতে বাংলাদেশীদের উপর পরিকল্পিত হামলা বেড়েই চলেছে। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, গত এক মাসে অনন্ত ১০ টির মতো ডাকাতি, হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ৫ টি বাড়িতে চুরি ও সামনার প্লেসের একটি বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে অজ্ঞাত দূর্বিতরা। তবে এসব ঘটনায় আতংকিত না হয়ে নিরাপত্ত্বা নিশ্চিতে নিজেদের উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশ ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশেষ করে বাড়ীতে বাড়ীতে সিকিউরিটি ক্যামরা স্থাপন ও কমিউনিটি পেট্রোল গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এছাড়াও কয়েকটি চিহ্নিত এভিনিউ ও স্ট্রিটে একাকী চলাফেরা থেকে বিরত থাকার কথা বলেছে স্থানীয় প্রশাসন। ঘটনাস্থলের এলাকাগুলোতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে বলেও জানা যায়। ভিক্টিম ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ অক্টোবর স্টুয়ার্ট এভিনিউ’তে ৩ কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বাংলাদেশী শাহ আলমকে অতর্কিত হামলা করে মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যায়।
গত ১৫ অক্টোবর নুর উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তার নিজের বাড়ীর ড্রাইভ ওয়েতে কাজ করার সময় পিছন থেকে হামলা করে ক্রেডিট কার্ড, নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন ও গাড়ীর চাবি নিয়ে পালিয়ে যায় দুই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। তাৎক্ষণিক পুলিশ আসলেও দুবৃর্ত্তদের গেফ্র তার করা সম্ভব হয়নি। নর উদ্দিন জানান, দুবৃত্তরা তার নাকের হাড় ভেঙ্গে ফেলেছে। এছাড়াও সন্ত্রাসীদের আঘাতে তার চোখের উপরের অংশ কেটে যায়। তিনি জানান, নতুন বাড়ী কিনে সাইডিংয়ের কাজ করছিলাম, বেলা ১ টার দিকে দুইজন ছেলে-মেয়ে এসে বাড়ী ভাড়া দিবো কিনা জানতে চায়, ওই বাড়ী নিজে থাকার কথা বললে তারা চলে যায়। তার একটু পরেই মুখোশ পরা দুই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক পিছন থেকে অতর্কিত হামলা করে বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে সব নিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ১৯ অক্টোবর মোহাম্মেদ সাহাব উদ্দিনকে হুমাসন এভিনিউ’তে তার নিজের বাড়ীর সামনে রাত ৯ টার দিকে ৪ কৃষ্ণাঙ্গ যুবক হামলা করে মোবাইল, নগদ অর্থ ও ক্রিডিট কার্ড নিয়ে পালিয়ে যায়। কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি আঘাত করে সাহাব উদ্দিনের নাকের হাড় ভেঙ্গে ফেলে। এছাড়ার তিনি শরীরের অন্যান্য স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। গত কয়েক দিনে হামলা ও ডাকাতির কবলে পড়েছেন মামুন হোসাইন টিটু, মোহাম্মেদ মোহসিন, শাহিন ও রানা। এছাড়াও হুমাসন এভিনিউ ও সামনার ঘটেছে। গত ২৬ অক্টোবর মাওলানা ফয়জল্লাহ চৌধরুীর সামনার প্লেসের একটি খালি বাড়ীতে দুবৃর্ত্তরা আগুন লাগিয়ে দেয় বলে জানা যায়। তবে তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিস উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। এ সময় বাড়ীটি পিছনের অংশ আংশিক পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস প্রথম তলার শট সার্কিট আগুনের সূত্রপাত বললেও বাড়ীর মালিকের দাবি, প্রথম তলায় কোন প্রকার বিদ্যুত সক্রিয় ছিলোনা। এরআগেও বাড়িটিতে দুইবার ভাঙ্গচুর ও চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।

গত ২৬ অক্টোবর বেইলী ও জেনিসি এ্যাভিনিউ সংলগ্ন কমিউনিটির সুপরিচিত ব্যক্তি এডভোকেট শহীদুল্লাহ’র বাড়ীতে দুর্বৃত্তরা জানালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে সিকিউরিটি ক্যামরা, মনিটর খুলে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও তারা ৫ টি নতুন জানালা খুলে নিয়ে যায়। চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় রিপোর্ট করা হয়েছে বলে জানান এডভোকেট শহীদুল্লাহ। ইতিমধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং তৎপরতা চলছে বলেও জানা যায়।

বাফোলো সিটির ক্রাইম ডাটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাফোলো শহর দীর্ঘদিন ধরেই হাইক্রাইম জোন হিসেবে চিহ্নিত। বেশ কয়েক বছর আগে কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকাগুলো মাদক চুরি-ডাকাতি নিয়মিত ঘটনা ছিলো। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশীদের আগমনের ফলে বাফোলো চিত্র অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। মূলত: ২০১৫ সাল থেকে তুলনামূলক অপরাধ কমতে থাকে। গত বছর বাফোলো’র লাকোয়ানা ডিস্ট্রিকে সর্বোচ্চ ২১২ টি এবং লেংকেস্টারে সর্ব নিম্ন ৭৩ টি ক্রাইমের তথ্য উল্লেখ করা হয়। বাফোলো সিটিতে ৫০৭ টি মতো ক্রাইমের ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সিটিতে গড় ক্রামের সংখ্যা ২১০ টি। ডাটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাপ্তাহের শুক্র, শনি ও রবিবার ক্রাইম রেট বেশী। একই সঙ্গে বছরের হলি ডে’র পূর্বে ক্রাইম রেট অনেক বেড়ে যায়। এ সময় প্রচুর ডাকাতির ঘটনার ঘটে। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত Í ক্রাইম সংঘটিত হয় বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় হামলা, চুরি ও ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সামনে বেশ কয়েকটি বড় বড় হলি ডে। এ সময় নিরাপত্ত্বা নিশ্চিতের জন্য কমিউনিটির ঐক্যবদ্ধতা ও সচেতনতা জরুরী বলে মনে করছেন ভিক্টিম ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশীরা কেন টাগের্ট: সূত্র মতে, বাফোলো’তে বাংলাদেশীদের আগমনের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে চুরি-ডাকাতি ও হামলার ঘটনা ঘটেই চলছে। তবে এই ধরনের ঘটনা নিউইয়র্ক সিটিতেও বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ঘটছে। কয়েক বছর আগেও ওজনপার্ক, সাউথ জ্যামাইকা, ফুলটন ও ব্রুকলীনে অনেকগুলো হামলা ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব স্থানে কমিউনিটির শক্ত অবস্থানের ফলে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়। বর্তমানে শান্তিতে বসবাস করছে বাংলাদেশীরা। অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেও ধারণা বাংলাদেশী কমিউনিটির ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাফোলো’র পরিস্থিতিও পরিবর্তন হবে।

বাফোলো’তে হামলা ও ডাকাতির শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, বাফোলো’তে বাংলাদেশীদের আগমনে ফলে গত ৫ বছরে বাড়ী মূল্য কয়েক গুন বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাড়াও বেড়েছে। ধারণা করা হয়, এতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃ ষ্ণাঙ্গরা। তাদের মাদক ব্যবসা ও থাকার জায়গা সংকোচিত হয়ে আসছে। তাই কৃ ষ্ণাঙ্গরা ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশীদের টার্গেট করছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
পুলিশের ভূমিকা: হামলা ও ডাকাতির ঘটনায় ভিক্টিমরা পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও পুলিশকে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। পুলিশকে ঘটনার তদন্ত করতে হয়। অকুস্থলে সিকিউরিটি ক্যামরা না থাকলে জড়িতদের খুঁজে বের করা কঠিন। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার বা কারো’র বাড়ী রেড দেওয়া যায়না। এজন্য বাড়ীতে বাড়ীতে সিকিউ- রিটি ক্যামরা স্থাপনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।ঘটনাস্থলে দ্রুত পুলিশ পৌছে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কমিউনিটি এ্যাংগেইজমেন্ট ক্যাপ্টেন কেভিন নিকলস। তিনি বলেন, ক্রাইম ইন্সিডেন্ট স্থানে দ্রুততার সঙ্গে পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও ক্রাইম জোন এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
নিজস্ব কমিউনিটি পেট্রো ল: বাংলাদেশী কমিউনিটি নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নিজস্ব কমিউনিটি পেট্রোল গঠন প্রয়োজন বলে মনে করেন ভলেন্টিয়ারি পুলিশ অফিসার ফজলুল করিম। তিনি বলেন, কমিউনিটির নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করতে নিজ উদ্যোগে সবাই এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশের ভলেন্টিয়ারি সার্ভিসে যোগ দিয়ে নিজের কমিউনিটির নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করার আহবান জানান তিনি। ভলেন্টিয়ারি পুি লশে যোগ দেওয়ার জন্য ৯১৭৬০৯৮৫১০ নাম্বারে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়।
বাফোলো মুসলিম কমিউনিটির অন্যতম নেতা আশফাক চৌধুরী বলেন, ভিক্টিমদের নিয়ে ডেমোনেস্ট্রেশন করে সিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। নিজস্ব কমিউনিটি পেট্রোল সময়ের দাবী উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাফোলো’র মুসলমানদের নিরাপত্ত্বার জন্য কমিউনিটি পেট্রোল গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

Comments


মন্তব্য করুন


আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।